একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়?
একাদশী কি (What is Ekhadoshi)
➤চলুন একাদশী ব্রতের মাহাত্য বর্ননা করছি–
জৈমিনি ঋষি কে?
জৈমিনি ঋষি একজন প্রাচীন ভারতীয় ঋষি ও ধার্মিক গুরু ছিলেন। তিনি ভারতীয় দার্শনিক শ্রুতি দর্শনের মধ্যে একজন ছিলেন এবং তার নাম মুখ্যভাবে "জৈমিনি" দ্বারা পরিচিত হয়েছে। জৈমিনি ঋষি ব্যাকরণ শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং মিমাংসা দর্শনের একজন প্রমুখ আচার্য ছিলেন।
মহর্ষি ব্যাসদেব কে?
মহর্ষি ব্যাসদেব হলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় ঋষি ও প্রতিষ্ঠাতা গুরু। তিনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক এবং ধার্মিক পরম্পরার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। ব্যাসদেব মহর্ষি অনেক গ্রন্থ লেখেন এবং সংস্কৃত ভাষার নির্মাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্যাসদেব মহর্ষির লেখা "মহাভারত" একটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ মহাকাব্য, যা হিন্দু পুরাণিক কাহিনী এবং ধার্মিক বৈদ্যুতিকে বিস্তারিত বর্ণনা করে। এছাড়া, ব্যাসদেব মহর্ষি প্রমুখ ধর্মগ্রন্থ "ভগবদ্গীতা" এবং "ব্রহ্মসূত্র" লেখেন, যা হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলি। ব্যাসদেব মহর্ষির অসীম জ্ঞান এবং বৈদিক শিক্ষার প্রতি অগ্রদূত হিসেবে তিনি অত্যন্ত মহৎ ব্যক্তি ছিলেন এবং তার গ্রন্থগুলি আজও ধার্মিক ও দার্শনিক চর্চা এবং অধ্যয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন এ আর্তক্রন্দন কেন?
আর্তক্রন্দন অর্থ কি?
আর্তক্রন্দন" শব্দের অর্থ হলো অত্যন্ত ব্যথিত ও ক্রন্দন করা, অর্থাৎ বেশী কান্না করা বা দুঃখে কান্না করা। এটি অক্সিজেন বা আভা বা অন্য কোনো সাহায্যের অভাবে হয় যা মানুষের জীবনে ব্যক্তিগত দুঃখ বা প্রতিসাম্যের ফলাফলে ঘটতে পারে। "আর্তক্রন্দন" শব্দটি সাধারণভাবে কান্না বা বিশেষ কান্না দর্শায়।
যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্তের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে।
যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদ্গতির ব্যবস্থা করব।
ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথিরূপে এক দেবীমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করল।
বৈকুণ্ঠ কি? বৈকুণ্ঠে মানুষ কি করে?
হিন্দুধর্মে, বৈকুণ্ঠ (সংস্কৃত: वैकुण्ठ) বা বিষ্ণুলোক হলো ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর আবাস। বৈকুন্ঠের আরেক নাম বিষ্ণুলোক । "বৈকুণ্ঠ" হলো হিন্দু ধর্মের একটি পরমলোক বা স্বর্গের নাম। এটি হিন্দু ধর্মে ভগবান বিষ্ণুর স্বর্গীয় নিবাসস্থান হিসেবে পরিচিত। বৈকুণ্ঠ পরমলোকে সুখের এবং প্রশান্তির আবাস মনোনিবেশ করে থাকেন ভগবান বিষ্ণু ও তার দেবী লক্ষ্মী। বৈকুণ্ঠের স্বভাব অত্যন্ত দিব্যময় এবং প্রশান্ত, এবং সবচেয়ে উচ্চ আনন্দের অবস্থান হিসেবে বর্ণিত হয়।
শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।
কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল- হে ভগবান! আমিও আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুণ্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কী হবে?
আরও পড়ুন: শ্রীকৃষ্ণের বাণী-০১ | সব সময়ে ফিরে আসা একটি উপহারের গল্প
আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুণ্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কী হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন?
পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
কৈটভনাশন কি? কৈটভনাশন কাকে ডাকা হয়?
হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন।
পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এ ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভূত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে।
তাহলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।
"এজন্যই তাই শুধু একাদশী ব্রত রাখলেই সমস্ত পাপ দূর হবে না তার জন্য ব্রতের সকল সঠিক নিয়ম মেনে পালন করতে হবে "।
একাদশী ব্রত কিভাবে সঠিক নিয়ম মেনে পালন করবেন?
✪ একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মগুলো হলো:
- সমর্থপক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার।
- অসমর্থপক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
- এছাড়াও, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে ফলমূলাদি অনুকল্প গ্রহণ।
✪ নিষিদ্ধ রবিশস্য
- ধানজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি।
- গমজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিক্স ইত্যাদি।
- যব বা ভুট্টাজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।
- ডালজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি, ছোলা, অড়হর, ফেলন, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি।
- সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পঞ্চ রবিশস্যের যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।
✪ সতর্কতা
- একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ।
- সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম নিষিদ্ধ।
এই ব্লগপোস্টে আমি হিন্দুদের একাদশী ব্রত পালনের ইতিহাস এবং এই ব্রত পালনের নিয়মাবলি তুলে ধরেছি। ভুল ও ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏 এবং এ সম্পর্কে নিচের কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মতামত জানাতে পারবেন। ধন্যবাদ 💟, এতক্ষণ সময় দিয়ে পড়ার জন্য। আমাদের ফেসবুক ফেইজ ও গ্রুপে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ রইল।
সম্পাদনায়: ধ্রুব দাশ (সিইও)
প্রযোজনা: VedicVoyage
অন্যান্য সহযোগিতায়: ChatGPT, Wikipedia
